রমজানের প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন

সিয়াম সাধনার মাস রমজান। তাকওয়ার মাস রমজান। কোরআন নাজিলের মাস রমজান।এই রমজান মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলত পূর্ণ। মুসলমানদের জন্য এই মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও আমল করার মাস। বোনাসের মাসও বলা হয়ে তাকে। একটি আমল করলে ১০ নেকি পাওয়া যায় কিন্তু রমজান মাসের কারনে সেটা ৭০ গুন বৃদ্ধি হয়ে যায়।

রমজানের প্রস্তুতি:

যে কোন কাজে প্রস্তুতি নিলে কাজ করা সহজ হয়ে যায়। আমাদের মাঝে রমজান মাস আসবে আমরা প্রস্তুতি নেব না তা কি হয়। রমজানের প্রস্তুতি বলতে বুঝায় যে আমাদের আমল করার মন মানসিকতা তৈরি ও নিজেকে এবাদত করার প্রস্তুত করা। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সা: রজব ও শাবান মাস থেকে রোজা রাখার প্রস্তুতি নিতেন।

রমজান মাস রহমত বরকত ও মাগফেরাত এবং কোরআনের নাজিলের মাস এই মাহে রমজান। এই মাসের সকল এবাদত আল্লাহ তাআ’লা অন্য মাস থেকে ৭০ গুন বৃদ্ধি করে দের। এই মাসকে মুসলমানদের বোনাসের মাসও বলা হয়ে তাকে। সকল গুনাহ মাপ করার জন্য এই মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই মাস আসার আগে থেকেই এই মাসের জন্য প্রস্তুতি নেওয়স আমাদের দরকার। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এই মাসের আগে অনেক গুলো প্রস্তুতি নিতেন ।

যে যে প্রস্তুতি নিতে পারি আমরা রমজানের আগমনে। তা নিছে দেওয়া হলো :

  • রোজা রাখার প্রস্তুতি নেওয়া।
  • দান ও সহযোগিতা  করার প্রস্তুতি নেওয়া।
  • কোরআন তেলাওয়াত শুরু করা।
  • নিয়মিত নামাজ পড়া।
  • রমজানের রোজার রাখার জন্য নিজের শরীর ঠিক রাখা।
  • মিথ্যা কথা বলা বাদ দেওয়া ও চেষ্টা করা।
  • গীবত করা থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
  • ইবাদত করার জন্য নিজেকে প্রস্তুতি ও সময় বেড় করা।
  • তওবা ও ইসতেগফার করা যে যে গুনাহ করা হয়েছে সেগুলো জন্য।
  • চাঁদের হিসাব রাখা।
  • শিরক থেকে মুক্ত থাকা।
  • হিংসা থেকে মুক্ত থাকা।
  • রমজানের রোজা রাখার সঠিক হাদিস জানা।

রজবের শুরু থেকেই রাসুল (সা.) দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।’ (শুআবুল ইমান, হাদিস : ৩৫৩৪)

দোয়াটির অর্থ—হে আল্লাহ, আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দিন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন (রমজান পর্যন্ত আমাদের আয়ু বৃদ্ধি করে দিন, যাতে আমরা রমজানে যথাযথ আমল করতে পারি)।

রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা রমজানের (প্রস্তুতির উদ্দেশ্যে) শাবানের দিনগুলো গণনা করতে থাকো। (মুসান্নেফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস :৭৩০৩, সুনানে তিরমিজি, হাদিস :৬৭৮, আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস :৮২৪২)।

রজব ও শাবান দুই মাসব্যাপী আমাদের প্রার্থনা ছিল, ‘এসো হে রমজান’। প্রতীক্ষার প্রহর শেষে দ্বারে অপেক্ষমাণ কাঙ্ক্ষিত মাহে রমজান। প্রিয় রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়; শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’ (বুখারি, খণ্ড: ৩, হাদিস: ১,৭৭৮)

আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ

আর তোমরা সবাই, হে মুমিনেরা!, আল্লাহর কাছে তওবা কর যাতে করে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা আন-নুর: আয়াত ৩১)

তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন :



( قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ ) [10 يونس : 58]


“বলুন, এটি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে ও তাঁর দয়ায়। সুতরাং এতে তারা আনন্দিত হোক ।এটি তারা যা সঞ্চয় করে রাখে তা থেকে উত্তম।” -১০ ইঊনুস : ৫৮

হজরত আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলতে শুনেছি-

كَانَ يَكُونُ عَلَيَّ الصَّوْمُ مِنْ رَمَضَانَ فَمَا أَسْتَطِيعُ أَنْ أَقْضِيَهُ إِلا فِي شَعْبَانَ

‘আমার উপর বিগত রমজানের রোজা বাকি থাকত যার কাজা আমি শাবান ছাড়া আদায় করতে পারতাম না।’ (বুখারি ১৮৪৯ ও মুসলিম ১১৪৬)

হাফিজ ইবনু হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ‘এ হাদিস দ্বারা হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক শাবান মাসে রমজানের কাজা রোজা পালনের চেষ্টা প্রমাণ করে যে, এক রমজান এর কাজা আরেক রমজান প্রবেশ করা পর্যন্ত দেরি করা জায়েয নয়।’ (ফাতহুল বারি ৪/১৯১)

‘হে মুমিনরা! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

রমজান মাসের প্রস্তুতিস্বরূপ শাবান মাস থেকেই রোজা রাখা শুরু করা। হাদিসে পাকে এসেছে, হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন-

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ لا يُفْطِرُ وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ لا يَصُومُ، فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ إِلا رَمَضَانَ، وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনভাবে রোজা পালন করতেন যে আমরা বলতাম তিনি আর রোজা ভঙ্গ করবেন না এবং এমনভাবে রোজা ভঙ্গ করতেন যে আমরা বলতাম, তিনি আর রোজা পালন করবেন না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রমজান ছাড়া অন্য কোন মাসের গোটা অংশ সাওম পালন করতে দেখিনি এবং শাবান ছাড়া অন্য কোনো মাসে অধিক রোজা পালন করতে দেখিনি।’ (বুখারি ১৮৬৮ ও মুসলিম ১১৫৬)

আমাদের কাছে রমজান মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এই মাস আসার আগে আমাদের অনেক প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের নিজেকে তৈরি করতে হবে। নিজের সকল ভুল গুলো বাদ দিয়ে নিজেকে ভালো করতে হবে। আমরা যদি রমজান মাস পাওয়ার পড়েও নিজের গুনাহ মাফ না করায়তে পারি সেটা আমাদের মত কপাল পুরা আর কে হবে।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।