আরাফার দিনের আমল

ইসলামের ইতিহাসে আরাফা একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থান। এই আরাফার দিনের অনেক আমল রয়েছে। মহান আল্লাহ তাআ’লা এই দিনকে শ্রেষ্ঠতম দিন হিসাবে বলেছেন। আরাফার দিনের রোজা ও দোয়া আমল এগুলো অনেক ফজিলত পূর্ণ। হজ্জের জন্য আরাফাত ময়দান একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

আরাফার দিনের আমল ও ফজিলত:

নবী করিম (সা.) বলেন, আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তিনি এ রোজা দ্বারা পূর্ববর্তী এক বছরের এবং পরবর্তী এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। আরাফার রোজা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। আমলের প্রতিদান হলো সামনের ও পেছনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।

হাদিসে আছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, জিলহজ মাসের প্রথম দশকের প্রতিটি দিন ১ হাজার দিনের সমতুল্য আর আরাফার দিনটি ১০ হাজার দিনের সমান মর্যাদাপূর্ণ। -ফতহুল বারি

ইকরামা থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.)-এর বাড়িতে প্রবেশ করে আরাফার দিবসে আরাফার ময়দানে থাকা অবস্থায় রোজা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আরাফার ময়দানে আরাফার দিবসের রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। -মুসনাদে আহমদ: ২/৩০৪
 

হাজিদের জন্য আরাফার দিবসে রোজা রাখা মাকরুহ। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের সময় আরাফার দিবসে রোজা রাখেননি। বরং সবার সম্মুখে তিনি দুধ পান করেছেন। -মুসলিম

  • আরাফার সময় শ্রেষ্ঠতম দোয়া :

আরাফার সময় এই দোয়া পাঠ করিলে অনেক নেকি লাভ করা যাবে। এই দোয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সা: এই দোয়া পড়তেন এবং আমাদের ও পড়তে হবে:

তা হলো— لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ‘

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদির।’ 

অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তারই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। (জামে তিরমিজি: ৩৫৮৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩৭৭৮)

  • আরাফার দিনকে শ্রেষ্ঠতম দিন বলা হয়:

মহান আল্লাহ তাআ’লা আরাফার দিনকে অনেক মর্যাদা পূর্ণ হিসাবে দিয়েছেন। এই আরাফার ময়দানে মানুষ আল্লাহর কাছে দোয়া ও গুনাহ মাফ করায়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আরাফাতের দিনের তুলনায় উত্তম কোনো দিন নেই।’ (মাজমাউল জাওয়াইদ, হাদিস : ৩/২৫৬)

  • আরাফার দিন হজ্জ পালনের দিন:

আল্লাহ তাআ’লা এই আরাফার দিনকে হজ্জের দিন বলা হয়। হজ্জ ফালন করতে এই আরাফার ময়দানে যেতে হয় না হলে হজ্জ ফালন হয় না। তাই এই আরাফার দিনকে মহান আল্লাহ তাআ’লা হজ্জের দিন বলেছেন।

  • আল্লাহ তাআলা বনী আদম থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছেন:

আল্লাহ তাআ’লা এই আরাফার দিনকে মানুষের প্রতিশ্রুতি নেন। মানুষের যত গুনাহ করুক না কেন মহান আল্লাহ তাআ’লা তার গুনাহ মাফ করানোর জন্য বসে আছেন। এই আরাফার দিনে আল্লাহ কাছে সঠিক ভাবে গুনাহ কথা বলে আল্লাহর কাছে মাফ ছাওয়াতে পারে তাকে মাফ করে দেন। এই আদম মানুষের কাছে আল্লাহ তাআ’লা প্রতিশ্রুতি নেন এই দিনে।

  • আরাফার দিনে রোজা রাখলে বিশেষ পুরস্কার:

আরাফার দিনে কোন মানুষ যদি সত্য নিয়তে রোজা রাখে তার জন্য আল্লাহ তাআ’লা বিশেষ পুরস্কার দিবেন। যদি কোন ব্যক্তি সত্য নিয়তে রোজা রাখে তার ১ বছরের পেছনের গুনাহ ও সামনের গুনাহ মাফ করে দিবেন।

  • দ্বীন ও আল্লাহর নেয়ামত পরিপূর্ণ হওয়ার দিন:

আরাফাত দিন মানে হলো আল্লাহ তাআ’লা গুনাহ ও নেকি লাভ করার দিন। এই দিনে মহান আল্লাহ তাআ’লা বন্ধাকে অনেক নেয়ামত ও রহমত বরকত নাজিল করেন। সকল গুনাহ মাপ করে দেন।

  • জাহান্নাম থেকে মুক্তির দিন:

আরাফাত দিনকে আবার জাহান্নাম থেকে মুক্তির দিনও বলা হয়ে তাকে। যত গুনাহ আছে মহান আল্লাহ তাআ’লা তাকে মাফ করে দিবেন। জাহান্নামের কঠিন গুনাহ আল্লাহ তাআ’লা মাফ করে দিবেন। জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর দরজা খুলে রেখেছেন এই আরাফার দিনে।

  • ইসলাম পূর্ণতা লাভ:

আরাফার ময়দানে যেতে পারলেই তু ইসলামের পূর্ণতা লাভ পাওয়া যায়। যাদের উপর ফরজ করা হয়েছে এই হজ্জ তাদের খুব তারাতাড়ি হজ্জ পালন করা খুবই দরকার। হজ্জ পালন করতে পারলে ইসলামের পূর্ণতা লাভ পাওয়া যায়।

আনন্দের দিন : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফাতের দিন, কোরবানির দিন এবং তাশরিকের দিনগুলো হচ্ছে ইসলামে আমাদের ঈদের দিন। এই দিনগুলো হচ্ছে পানাহারের দিন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪২১)

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, বদরের যুদ্ধের দিন বাদে শয়তান সবচেয়ে বেশি অপদস্থ, ধিকৃত ও ক্রোধান্বিত হয় আরাফার দিনে। কেননা এ দিন শয়তান আল্লাহ পাকের অত্যধিক রহমত এবং বান্দার অগণিত পাপরাশি মাফ হতে দেখতে পায়। -মুয়াত্তা ও মিশকাত

আমরা জানতে পারলাম যে আরাফার দিনের আমল সমূহ। এই সকল দিনের সেরা দিন হলো এই আরাফার দিন। এই দিনে আমল করলো আল্লাহ তাআ’লা সামনের ও পেছনের গুনাহ মাফ করে দিবেন৷ আল্লাহ তাআ’লা সকল গুনাহ মাপ করেন দিবেন এবং জাহান্নাম থেকে জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ করে দিবেন। আমরা এই আরাফার দিনের আমল গুলো পালন করব, আল্লাহ তাআ’লা সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুক আমিন।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।