সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা ও নফল রোযা রাখা সুন্নত ও মুস্তাহাব।এই দিনে রোজা রাখলে অনেক অনেক নেকি লাভ করা যায়। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সা: প্রতিদিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন ও বিভিন্ন আমল করতেন।
সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজার ফজিলত :
সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখলে আল্লাহ তা সে ব্যাক্তিকে তার গুনাহ মাফ করবেন এবং যারা সম্পর্কে নষ্ট করে তাদের গুনাহ মাফ করবেন না। সপ্তাহে এই ২ দিন রোজা রাখার অনেক ফজিলত। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার আল্লাহ আলার নিকট বান্দার আমলসমূহ পেশ করা হয়। সুতরাং আমার আমলসমূহ যেনো রোজা পালনরত অবস্থায় উপস্থাপিত হয়_ এটাই আমার পছন্দনীয়। তিরমিজি-৭৪৭,নাসায়ি কুবরা-২৬৬৭
প্রিয়নবি (সা.) প্রতি সপ্তাহে ২দিন রোজা রাখতেন। আর তাহলো সোমবার ও বৃহস্পতিবারের দোয়া। এই দুই দিন রোজা রাখার ফজিলত অনেক রয়েছে।
প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার দিন নফল রোযা রাখা সুন্নত ও মুস্তাহাব। কারণ, তা ছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের আমল। আর এই দুই দিন আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের নিকট বান্দার আমল পেশ করা হয়। মা আয়ি’শাহ (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) সোমবার ও বৃহস্পতিবার দিন রোযা রাখাকে প্রাধান্য দিতেন।’ (তিরমিযী : ১০২৭)।
সোমবার ও বৃহস্পতিবার এই দুইদিন আল্লাহ তাআ’লা তাঁর রহমতের উসীলায় মুসলমানদের গুনাহ মাফ করেন। তবে এমন দুইজন মুসলমান, যারা পরস্পর সম্পর্ক ছিন্ন করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা এই গুনাহ থেকে তোওবা করে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন করবে
নবী (সা.) সোমবার দিন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, সোমবারেই তাঁকে নবুওয়ত দেওয়া হয় এবং সোমবার দিনেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আবু কাতাদাহ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কে সোমবার দিন রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছিলাম এবং এই দিনেই আমাকে নবুওয়াত প্রদান করা হয়েছিলো অথবা, এই দিনে আমার উপর (ক্বুরআন) নাযিল করা হয়েছে।’ (সহীহ মুসলিম : ১১৬২)।
আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সোমবারে রোযা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি এর উত্তরে বলেছিলেন,
ذَلِكَ يَوْم وُلِدَتْ فِيْهِ وَيَوْم بِعْثَتٍ فِيْهِ أَوْ أُنْزِلَ عَلَى فِيْهِ
‘‘এ দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এ দিনে আমাকে নবুওয়াত দেয়া হয়েছে বা আমার উপর কুরআন নাযিল শুরু হয়েছে।’’ (মুসলিম : ১১৬২)
অন্য আরেক হাদীসে আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الإِثْنَيْنِ وَالْخَمِيْسِ فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِيْ وَأَنَا صَائِمٌ
(প্রত্যেক সপ্তাহে) সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়ে থাকে। কাজেই আমি রোযাদার অবস্থায় আমার আমলগুলো আল্লাহর দরবারে পেশ করা হোক এমনটি আমি পছন্দ করছি। (তিরমিযী : ৭৪৭)
মা আয়িশা (রাঃ) বলেছেন,
أَنَّ النَّبِيَّ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ يَتَحَرَّى صِيَامَ الإِثْنَيْنِ وَالْخَمِيْسِ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবার সিয়াম পালনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতেন। (নাসাঈ : ২৩৬০; তিরমিযী : ৭৪৫)
সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজার নিয়ত সম্পর্কে আলোচনা :-
সেহরি খাওয়ার পড় থেকে দিনের শেষ ভাগে মনে মনে পড়লেই সেটা আদায় হয়ে যাবে। সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজার নিয়ত ঠিক ফরজ রোজার মতই নিয়ত করলেই হবে। সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজার অনেক ফজিলত তু আছে। এই রোজা রাখলে আল্লাহ তাআ’লা সকল মুসলমানদের সকল গুনাহ থেকে মাফ করে দেয়।
সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজার নিয়ত বাংলা:
আমি আজ সোমবার/বৃহস্পতিবারের রোজা রাখার নিয়ত করলাম। হে আল্লাহ তাআ’লা তুমি আমার রোজা কবুল করুন। এভাবে পড়লেই হয়ে যাবে। যারা আরবি পাড়েন তারা ঐটায় পড়ায় উত্তম।
নিয়ত মানে হলো কোন কাজ করার মন মানসিকতা তৈরি করাকে বুঝায়। নিয়ত শুধু মুখে বলতে হবে তা না, মনে মনে বা ইচ্ছে করলেই আদায় হয়ে যাবে। রোজার কোন সমস্যা হবে না।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা সহ বাকি সকল রোজা রাখব আল্লাহ তাআলা তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০১; তিরমিজি, হাদিস : ৬৮৩)
তিনি বলেন, ‘তোমারদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে- যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজার নিয়ত টিক রমজানের রোজার নিয়তের মতই, তাই রমজানের রোজার মতই নিয়ত করলেই হয়ে যাবে।
রোজার আরবি নিয়ত:
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
রোজার নিয়তের বাংলা উচ্চারণ :
নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
রোজার নিয়তের বাংলা অর্থ :
হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
তাই আমরা জানতে পারলাম যে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা ফজিলত ও রোজার নিয়ত। আল্লাহ তাআ’লা রোজাদার ব্যক্তির সকল গুনাহ মাপ করে এবং যা ছায় তা দেয়। রোজা রাখলে আল্লাহ তাআ’লা অনেক নেকি পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে আমরা নফল রোজা রাখব আমিন।