আরাফার এ রোজা ফরয ওয়াজিব বা মুস্তাহাব এরকম কিছু না। জিলহজের প্রথম দশ দিন অতি বরকতপূর্ণ। আরাফার রোজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলত পূর্ণ রোজা। জিলহজ্জ মাসে ১ তারিখ থেকে ১০ তারিখ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই ১০ দিন বা ৯ দিন অন্য মাসের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই আরাফার দিনে রোজা রাখলে আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন যে সামনের ও পেছনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।

আরাফার দিন রোজা রাখার ফজিলত ও হাদিস:

আরাফার দিনের রোজা রাখার ফজিলত পূর্ণ রোজা। এই রোজা গুলো অনেক সোয়াব। একটি রোজা সত্য নিয়তে রাখলে আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন সামনের ও পেছনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। আরাফাত মূল কাজ হলো হজ্জ পালন করা, এখানে রোজা মূখ বিষয় নয়। তবে এই রোজার অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের অনেক মানুষের মনে সন্দেহ আছে আমরা ৯ তারিখে রোজা রাখব নাকি ৮ তারিখে রাখব। হাজিরা তু ৯ তারিখে আরাফার ময়দানে তাকেন আমাদের দেশে সে সময় ৮ তারিখে তাকে তাহলে কি ৮ তারিখে রোজা রাখব। এই নিয়ে আমাদের মনে সন্দেহ আছে আরাফার রোজা নিয়ে। অনেক আলেম গন এই নিয়ে অনেক কথা বলেছে, কেউ কেউ আরব দিনের সাথে রাখতে বলে আবার আমাদের দেশে তারিখ মিলে না বলে পড়ের দিন রাখতে বলে। তাই এই নিয়ে তেমন সঠিক কোন হাদিস নেই বলা আছে বিশেষ করে ৯ তারিখে মানে আরাফার রোজা রাখতে। তাই আমরা ৮ এবং ৯ তারিখ দুইটায় রোজা রাখব।

হযরত হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিলহজের নবম দিন সিয়াম পালন করতেন এবং সিয়াম পালন করতেন আশুরার দিনে৷  (সুনানে আবু দাউদ, নাসায়ী, মুসনাদে আহমাদ)

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমের সূরা আল মায়িদার ৩নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন,


الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا


অর্থাৎ আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের মনোনীত দ্বীনকে পূর্ণতা দান করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম। ___সূরা আল মায়িদা আয়াত নং ৩

ইয়াওমে আরাফা’র রোযা সম্পর্কে প্রসিদ্ধ হাদীস

(صيام يوم عرفة أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده)
‘ইয়াওমে আরাফার রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তিনি এর দ্বারা এর আগের এক বছরের ও পরের একবছরের গোনাহ মাফ করবেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৬২

বিখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা মুবারকপুরী রহ. বলেছেন- হাফসা (রা.)-এর এ বর্ণনায় নবীজি জিলহজের নবম দিন রোজা রাখতেন; এটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে এবং এই দিনটিই ‘ইয়াওমে আরাফা’ বা আরাফার দিন।  (মিন্নাতুল মুনইম শরহু সহীহ মুসলিম ২/২১১)

হযরত আলী রা. বলেন-

أنه كان يكبر بعد صلاة الفجر يوم عرفة إلى صلاة العصر من آخر أيام التشريق

অর্থ : নবিজি স. ইয়াওমে আরাফা (০৯ যিলহজ) ফজরের পর থেকে ১৩ যিলহজ আসর পর্যন্ত তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৫৬৭৭]

রোজা আল্লাহ তাআ’লা সবচেয়ে পছন্দের আমল। আর আরাফার রোজার ফজিলত পূর্ণ এই রোজা। এই রোজা রাখলে আল্লাহ তাআ’লা ঘোষনা দিয়েছেন যে কোন ব্যক্তির সামনের এবং পেছনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।

আলী রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন- নবীজি ইয়াওমে আরাফা বা আরাফার দিন (৯ জিলহজ) ফজরের পর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক পাঠ করতেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস: ৫৬৭৭)

এদিন আল্লাহ তাআলা অসংখ্য বান্দাকে তিনি ক্ষমা করেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘আরাফার দিনের মতো আর কোনোদিন এত অধিক পরিমাণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয় না। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, কী চায় তারা? (সহিহ মুসলিম: ১৩৪৮) 

আমরা যে ভাবে রমজান মাসে রোজা রাখি টিক তেমন ভাবে এই আরাফার রোজা রাখব। ফজর আযানের আগে সেহেরি খাব এবং মাগরিবের আজান দিলে ইফতার করব।

 ৯ জিলহজকে ‘আরাফার দিন’ বলা হয়। (আল-ইনসাফ ৩/২৪৪) এই ৯ তারিখে হাজিরা হজ্জ পালন করে আরাফার ময়দানে। আমাদের দেশে মানুষরা ৮ এবং  ৯ তারিখ রোজা পালন করায় উত্তম হবে। বিভিন্ন আলেম গন সে কথায় বলেছেন।

জিবরাঈল (আ.) ৯ জিলহজে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে হজের আমলগুলো বিস্তারিত জানিয়েছেন। আর ‘আরাফা’ শব্দের এক অর্থ হলো জানা। তাই ৯ জিলহজকে ‘আরাফার দিন’ বলে। (আল-বিনায়া ৪/২১১)

 উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আরাফার দিনের রোজার ছওয়াব এক হাজার দিন রোজা রাখার সমান’। (তারগিব)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইয়াওমে আরাফার রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তিনি এর দ্বারা আগের এক বছরের ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করবেন’। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ১১৬২)।

মুসলিম শরিফের হাদিসে যে আরাফার দিনের রোজা বলতে ৯ জিলহজের কথা বলা হয়েছে, তা অন্য হাদিসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জনৈকা স্ত্রী বর্ণনা করেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) ৯ জিলহজ তারিখে রোজা রাখতেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৩৭, নাসাঈ, হাদিস : ২৩৭২)

আমরা জানতে পারলাম যে,  আরাফার দিন রোজা রাখার ফজিলত ও হাদিস। আরাফার রোজা ও হজ্জ ২ টাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জিলহজ্জ মাসের ১০ দিন অনেক দামি হয়। আল্লাহ তাআ’লা কাছে বান্ধার সকল গুনাহ ক্ষমা ছায়লে মাফ করে দিবেন। আমরা এই আরাফার সময় রোজা ও হজ্জ পালন করতে চেষ্টা করব।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।