তাশাহুদ/ আত্তাহিয়াতু মধ্যে শাহাদত আঙ্গুল  তুলা যায় একবার। এটির মানে হলো সাক্ষ্য দেওয়া বুঝায়। আত্তাহিয়াতু পড়তে পড়তে যখন ‘আশহাদু আল্লা… ইলাহা’ পর্যন্ত পৌঁছবে, তখন বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা দ্বারা গোল ভিত্ত বানাবে এবং শাহাদত আঙুল দ্বারা ইশারা করবে। এটি হচ্ছে সঠিক নিয়ম।

তাশাহুদে আঙ্গুল উঠানোর নিয়ম ও হাদিস

তাশাহুদের সময় মূলত একবার আঙ্গুল উঠানো-নামানোই হলো সুন্নত। যদিও বারবার উঠানো-নামানোকে অনেক আলেম সুন্নত মনে করেন।বারবার এই আঙ্গুল তুলা যায় না। এটি হচ্ছে সঠিক নিয়ম। আত্তাহিয়াতু মধ্যে আঙ্গুল তুলা নিয়ে এই সমাজে অনেক ধরনের লোক আছে বিভিন্ন ধরনের পতুয়া দিয়ে তাকেন। এগুলো কথা আমরা শুনব না নিজে যাছাই বাছাই করে কাজ করব। তাহলেই ভালো একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি হবে।

আত্তাহিয়াতু  সাক্ষ্য দেয়, তখন তার আঙুলও এই সাক্ষ্য দেবে। এ জন্য আত্তাহিয়াতু পড়তে পড়তে যখন ‘আশহাদু আল্লা… ইলাহা’ পর্যন্ত পৌঁছবে, তখন বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা দ্বারা গোল ভিত্ত বানাবে এবং শাহাদত আঙুল দ্বারা ইশারা করবে।এই ভাবে আমরা পালন করতে তাকব।

যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে এই আঙ্গুল না তুলব। আর যদি আঙ্গুল না তুলা হয় তাহলে নামাজ হয়ে যাবে। নামাজের কোন সমস্যা হবে না। এই আঙ্গুল তুলা হলো ওয়াজিব।

 হজরত আমের আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন—

عَنْ عَامِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا قَعَدَ يَدْعُو وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُمْنَى وَيَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُسْرَى وَأَشَارَ بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ وَوَضَعَ إِبْهَامَهُ

عَلَى إِصْبَعِهِ الْوُسْطَى وَيُلْقِمُ كَفَّهُ الْيُسْرَى رُكْبَتَهُ

রাসুলুল্লাহ (স.) যখন তাশাহুদ পড়ার জন্য বসতেন, তখন ডান হাতখানা ডান উরুর উপর এবং বাঁ হাতখানা বাঁ উরুর উপর রাখতেন। আর শাহাদত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। এ সময় তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলিকে মধ্যমার সাথে সংযুক্ত করতেন এবং বাঁ হাতের তালু (বাঁ) হাঁটুর রাখতেন। (সহিহ মুসলিম: ১৩৩৬, সহিহ ইবনে হিব্বান: ৫/২৭০)

হজরত ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে— عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ إِذَا جَلَسَ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَ يَدَيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْهِ وَرَفَعَ إِصْبَعَهُ الْيُمْنَى الَّتِى تَلِى الإِبْهَامَ فَدَعَا بِهَا وَيَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُسْرَى بَاسِطُهَا عَلَيْهَا

 রাসুলুল্লাহ (স.) নামাজ পড়ার সময় যখন বসতেন (বৈঠক করতেন) তখন হাত দুইখানা দুই হাঁটুর উপর রাখতেন। আর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির পার্শ্ববতী (শাহাদাত) আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করতেন এবং বাঁ হাত বাঁ হাঁটুর উপর ছড়িয়ে রাখতেন। (সহিহ মুসলিম: ১৩৩৭)

আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের (রা.) থেকে বর্ণিত— عن عبد الله بن الزبير أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يشير بأصبعه إذا دعا ولا يحركها ‘রাসুল (স.) যখন দোয়া পড়তেন (অর্থাৎ তাশাহুদ পড়তেন), তখন আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন, কিন্তু আঙ্গুল নাড়াতেই থাকতেন না।’ (সুনানে নাসায়ি কুবরা: ১১৯৩, সুনানে আবু দাউদ: ৯৮৯, মুসনাদে আবি আওয়ানা: ১৫৯৪)

আঙ্গুল নাড়াতে থাকার পক্ষেও হাদিস রয়েছে। তেমনই একটি হাদিস হলো–ﺛُﻢَّ ﻗَﺒَﺾَ ﺍﺛْﻨَﺘَﻴْﻦِ ﻣِﻦْ ﺃَﺻَﺎﺑِﻌِﻪِ ﻭَﺣَﻠَّﻖَ ﺣَﻠْﻘَﺔً، ﺛُﻢَّ ﺭَﻓَﻊَ ﺇِﺻْﺒَﻌَﻪُ ﻓَﺮَﺃَﻳْﺘُﻪُ ﻳُﺤَﺮِّﻛُﻬَﺎ ﻳَﺪْﻋُﻮ ﺑِﻬَﺎ রাসুলুল্লাহ (স.) দুটি আঙ্গুল গুটিয়ে বৃত্ত তৈরি করলেন আর আঙ্গুল উঠালেন। আমি দেখেছি তিনি সেটা নাড়াচাড়া করছেন; তা দ্বারা দোয়া করছেন। (নাসায়ি: ৮৯২)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ إِذَا جَلَسَ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَ يَدَيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْهِ وَرَفَعَ إِصْبَعَهُ الْيُمْنَى الَّتِى تَلِى الإِبْهَامَ فَدَعَا بِهَا وَيَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى رُكْبَتِهِ الْيُسْرَى بَاسِطُهَا عَلَيْهَا

হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ নামায পড়ার সময় যখন বসতেন বৈঠক করতেন] তখন হাত দুইখানা দ্ইু হাঁটুর উপর রাখতেন। আর ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির পার্শ্ববতী [শাহাদাত] আঙ্গুল উঠিয়ে ইশারা করতেন এবং বাঁ হাত বাঁ হাঁটুর উপর ছড়িয়ে রাখতেন। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৩৩৭}

عن عبد الله بن الزبير أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «كَانَ يُشِيرُ بِأُصْبُعِهِ إِذَا دَعَا، ‌وَلَا ‌يُحَرِّكُهَا

হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ যখন তাশাহুদ পড়তেন, তখন আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন, কিন্তু আঙ্গুল নাড়াতেই থাকতেন না। {সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১১৯৩, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৯৮৯, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-১৫৯৪}

فَيُحْتَمَلُ ‌أَنْ ‌يَكُونَ ‌الْمُرَادُ ‌بِالتَّحْرِيكِ الْإِشَارَةَ بِهَا لَا تَكْرِيرَ تَحْرِيكِهَا فَيَكُونَ مُوَافِقًا لِرِوَايَةِ ابْنِ الزُّبَيْرِ وَاللهُ تَعَالَى أَعْلَمُ

আঙ্গুল নাড়াতে থাকা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ইশারা করা। আঙ্গুল নাড়াতেই থাকা উদ্দেশ্য নয়। এ অর্থ নিলে এ হাদীসটি আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের রাঃ এর বর্ণনার সাথে মিলে যায়। {সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৬১৫}

তাই আমরা বলতে পারি যে, কোন কাজ না বুঝে শুনে করাই ভালো। ভালো করে বুঝে শুনে কাজ করব। আত্তাহিয়াতু মধ্যে আঙ্গুল তুলা নিয়ে সমাজে অনেক ধরনের কথা বাতা আর কত কি হয়তাছে। এগুলো আমরা এড়িয়ে চলব। আমাদের সঠিক বিষয়টা সম্পর্কে জানব এবং ভালো করে পালন করব।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।