আল্লাহতালা সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমরা কোরবানি দিয়ে থাকি। কোরবানী দেওয়া সঠিক বিধান রয়েছে। সাত ভাগে কোরবানী দেওয়া হাদিস রয়েছে যে সাত ভাগে কোরবানী দেওয়া যাবে, এটি হাদিসে জায়েজ আছে। সঠিক নিয়ত, আল্লাহকে রাজি এবং সন্তুষ্টি করার জন্য কোরবানী দিতেছি।
সাত ভাগে কুরবানী দেওয়ার হাদিস:
আমরা সাতের কম যে কোন সংখ্যা দিয়ে কোরবানী দিতে পারি, কিন্তু নিজের সামর্থ্য থাকলে একাই দিতে পারবেন এটি সবচেয়ে উত্তম হয়। যদি দিতে ছায় সাত ভাগে তাহলে উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ। (মুসলিম: ১৩১৮; বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৭) এভাবে একটি বড় পশুতে সর্বোচ্চ সাতজন শরীক হয়ে কোরবানি দিতে পারবে।
জাবের বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা হুদায়বিয়ার সনে উট সাতজনের পক্ষ থেকে এবং গরুও সাত জনের পক্ষ থেকে কোরবানি করেছিলাম।’ (সহিহ মুসলিম: ২৩২২, আবু দাউদ: ২৮০৯, তিরমিজি: ১৪২২, ইবনে মাজাহ: ৩১৩২)
ইমাম তিরমিযী (রহ) হাদীসটি যেই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন, তার শিরোনাম হচ্ছে, ‘باب ما جاء في الاشتراك في الأضحية’। অর্থাৎ কুরবানীতে শরীক হওয়ার অনুচ্ছেদ। অতঃপর তিনি হুদায়বিয়ায় উট ও গরুতে ৭ জন করে শরীক হয়ে কুরবানী করার আর একটি হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন:
والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم و غيرهم.
‘এর উপর সাহাবা এবং অন্যান্য আহলে ইলমগণের আমল রয়েছে’।
এই বাক্যটির ব্যাখ্যায় লামজহাবী আলেম মুবারকপূরী বলেন:
قوله (والعمل على هذا عند أهل العلم إلخ) أي على جواز اشتراك السبعة في البعير والبقرة في الهدي والأضحية- تحفة الأحوذي ৫/ ৭৩
‘অর্থাৎ হাদ্ঈ ও কুরবানীর উট ও গরুতে সাত জন শরীক হওয়ার বৈধতার ব্যপারে (আমল রয়েছে)’।
[সূত্রঃ তুহ্ফাতুল আহ্ ওয়াযী,৫/৭৩]।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: «نَحَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ الْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ
হযরত জাবিন বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হুদাইবিয়ার বছর এক একটি উট ও গরুতে সাতজনে শরীক হয়ে কুরবানী করেছি। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৩১৮, ৩০৪৮]
ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেছেন, “শরীকরা যদি সাতজন অপেক্ষা কম হয়, তাহলেও তা যথেষ্ট। অতিরিক্ত ভাগ দিয়ে তারা নফল করে। যেমন যাকে ছাগল দিতে হবে, সে যদি উট দেয়, তাহলে তাও যথেষ্ট হবে। আর ছাগল থেকে যা বেশি, তা হবে নফল।” ৪৬০ (কিতাবুল উম্ম ২/২৪৪)
عن جابر بن عبد الله، قال: «حججنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فنحرنا البعير عن سبعة، والبقرة عن سبعة». -رواه مسلم: 1318
“জাবের বিন আবদুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হজ পালন করি। আমরা সাত শরীকে একটি করে উট বা গরু কুরবানী করেছি।” –সহীহ মুসলিম, ১৩১৮ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৩০৫৩)
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি শিংওয়ালা সুন্দর সাদা-কালো দুম্বা আনতে বললেন… অতঃপর দো‘আ পড়লেন
بِسْمِ اللهِ اَللَّهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ وَآلِ مُحَمَّدٍ وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ-
উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা তাক্বাববাল মিন মুহাম্মাদিন ওয়া আলি মুহাম্মাদিন ওয়া মিন উম্মাতি মুহাম্মাদিন।
অর্থঃ ‘আল্লাহ্র নামে, হে আল্লাহ। আপনি কবুল করুন মুহাম্মাদের পক্ষ হ’তে, তার পরিবারের পক্ষ হ’তে ও তাঁর উম্মতের পক্ষ হ’তে’। এরপর উক্ত দুম্বা কুরবানী করলেন (ছহীহ মুসলিম, ছহীহ তিরমিযী হা/১২১০, ছহীহ আবুদাঊদ হা/২৪২৩; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩১২৮; মিশকাত, পৃঃ ১২৭, ২৮, হা/১৪৫৪ ‘কুরবানী’ অনুচ্ছেদ)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদায় হজ্জে আরাফার দিনে সমবেত জনমন্ডলীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে জনমন্ডলী! নিশ্চয়ই প্রতিটি পরিবারের উপরে প্রতি বছর একটি করে কুরবানী’ (সনদ ছহীহ, ছহীহ তিরমিযী হা/১২২৫; ছহীহ আবুদাঊদ হা/২৪২১; ছহীহ নাসাঈ হা/৩৯৪০; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/২৫৩৩; মিশকাত হা/১৪৭৮)।
আমরা উপরের হাদিস থেকে জানতে পারলাম যে, আল্লাহতালা সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমাদের কোরবানি দেওয়া হয়। কোরবানি বিদ্যান আল্লাহ তায়ালা যেভাবে বলেছেন হরযত মোহাম্মদ সাঃ যে ভাবে হাদিস দেখিয়ে গেছেন সে ভাবে আমরা পালন করব। সবাইকে সঠিক সঠিক হাদিস মেনে চলার তৌফিক দান করুক আমিন।