দুনিয়ার মানুষের হেদায়াতের জন্য আল্লাহ যুগে যুগে অনেক নবী-রাসূলকে প্রেরণ করেছেন তাঁদের মধ্যে হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ) সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল।আমরা দুরুদ পড়ব আল্লাহ ও নবী – রাসূলে উপর।  আর দুরুদ পড়লে অনেক অনেক নেকি লাভ করা যায়,  বিপদ আপদ এবং পরকালে অনেক নেকি লাভ করা যায়।

দুরুদ শরীফের ফজিলত

হযরত মোহাম্মদ (ছা:) প্রতি দুরুদ পাঠ করা তাঁর উম্মতের প্রতি অবশ্য পালনীয় একটি ইবাদত। এই ইবাদত পালনের মাধ্যমে দুরুদ পাঠকারী অনেক ছওয়াবের অধিকারী হয়ে থাকে, আমাদের সকলের উছিত ভালো করে দুরুদ শরীফ পাঠ করা।

  • ফেরেশতা কর্তৃক আল্লাহর কাছে রহমতের জন্য দো‘আ :

নবী রাসূলগনের উপর দুরুদ পড়লে ফেরেশতাগন আল্লাহ কাছে দোয়া করতে তাকে।

 أَكْثِرُوا الصَّلاةَ عَلَيَّ يَوْمَ الجُمُعَةِ فَإِنَّهُ أَتَانِيْ جِبْرِيْلُ آنِفًا عَنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ فَقَالَ مَا عَلَى الأَرْضِ مِنْ مُسْلِمٍ يُصَلِّيْ عَلَيْكَ مَرَّةً وَاحِدَةً إِلَّا صَلَّيْتُ أَنَا وَمَلَائِكَتِيْ عَلَيْهِ عَشْراً،

‘তোমরা জুম‘আর দিন আমার প্রতি বেশী বেশী দরূদ পাঠ কর। কারণ কিছুক্ষণ পূর্বে জিব্রীল তাঁর প্রতিপালক আল্লাহর নিকট থেকে আগমন করে বললেন, (হে নবী!) পৃথিবীর বুকে যে কোন মুসলিম তোমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, আমি তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করব এবং আমার ফেরেশতাবর্গ তার জন্য দশ বার ক্ষমা প্রার্থনা করবে’।[18] তিনি আরো বলেন. আমরা বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করব।

  • বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হওয়া থেকে রক্ষা

দুরুদ পাঠকারি যত বিপদ আপদ আছে সব থেকে রক্ষা করে। আল্লাহ তাআ’লা তার প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সা: উপর দুরুদ শরিফ পাঠ করলে সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে।

مَا جَلَسَ قَوْمٌ مَجْلِسًا لَمْ يَذْكُرُوا اللهَ فِيْهِ وَلَمْ يُصَلُّّوا عَلَى نَبِيِّهِمْ إِلاَّ كَانَ عَلَيْهِمْ تِرَةً فَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُمْ وَإِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُمْ ‘কোন সম্প্রদায় কোন মজলিসে বসে যদি আল্লাহ তা‘আলার যিকর না করে এবং তাদের নবীর প্রতি দরূদ পাঠ না করে, তারা বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হবে। আল্লাহ তা‘আলা চাইলে তাদেরকে শাস্তিও দিতে পারেন কিংবা মাফও করতে পারেন’।[36]

  • দুরুদ পাঠের দ্বারা অন্তর পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হয় :

দুরুদ শরীপ নিয়মিত পাঠ করলে সকল মানুষের অন্তর পরিস্কার হয়। আমল কর করতে ভালো লাগে,  এবাদত গুলো করতে আগ্রহী হয়।

রাসূল (ছাঃ) বলেন,

صَلُّوا عَلَيَّ، فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ عَلَيَّ زَكَاةٌ لَكُمْ، وَسَلُوا اللهَ لِي الْوَسِيْلَةَ

‘তোমরা আমার প্রতি দরূদ পাঠ কর। নিশ্চয়ই আমার উপর তোমাদের দরূদ তোমাদের (অন্তরের) পবিত্রতা। আর তোমরা আমার জন্য আল্লাহর নিকট ‘ওয়াসীলা’ চাও’।[33]

  • দুরুদ পাঠের মাধ্যমে চিন্তা দূর হয় :

দুরুদ পাঠ করলে সকল মানুষের যত ধরনের চিন্তা আছে সব থেকে আল্লাহ তাআ’লা দূর করে দেয়। আল্লাহ তাআ’লা বন্ধাদেরকে তার এবাদত ও দুনিয়ার সকল ধরনের কাজ সহজ করে দেয়।

দুরুদ পাঠ করার জন্য নবী করীম (ছাঃ) বললেন,

,إِذًا تُكْفَى هَمَّكَ، وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ

তাহ’লে তোমার চিন্তা ও ক্লেশের জন্য তা যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ মাফ করা হবে’।[32]

  • দো‘আ কবুল হয় দুরুদ পাঠ করলে :

দোয়া কবুল হওয়ার জন্য দুরুদ পাঠ করা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দুরুদ শরীপ পাঠ কারি সকল দোয়া আল্লাহ তাআ’লা কবুল করে নেই।

 নবী করীম (ছাঃ) বললেন,

سَلْ تُعْطَهْ

 سَلْ تُعْطَهْ

‘তুমি প্রার্থনা করতে থাক, তোমাকে দেয়া হবে; তুমি প্রার্থনা করতে থাকে তোমাকে দেয়া হবে।

  • জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা লাভ

দুরুদ পাঠকারী দুনিয়া থেকে সুসংবাদ পায়   জান্নাতে অনেক অনেক মর্যাদা লাভ করে তাকে।

রাসূল (ছাঃ) বলেন,

فَمَنْ كاَنَ أَكْثَرُهُمْ عَلَيَّ صَلَاةً كَانَ أَقْرَبُهُمْ مِنِّي مَنْزِلَةً،

‘যে ব্যক্তি যত বেশী আমার প্রতি দরূদ পাঠ করবে, সে ব্যক্তি (জান্নাতে) মর্যাদায় তত বেশী আমার নিকটবর্তী হবে’।[24]

  • রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আত লাভ :

দুরুদ শরীফ পাঠ করে যারা রাসূলে শাফায়াত পাবে তারা। নবী রাসূলগনের উপর দুরুদ শরিফ পাঠ করলে আল্লাহ ও নবী সবাই অনেক খুশি হয়। 

عَلَيَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللهَ لِي الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ لَا تَنْبَغِي اِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ وَأَرْجُوْ أَنْ أَكُوْنَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ لِي الْوَسِيْلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ-

‘তোমরা মুয়ায্যিনের আযান শুনলে তার উত্তরে সেই শব্দগুলোর পুনরাবৃত্তি করবে। আযান শেষে আমার উপর দুরুদ পাঠ করবে। কারণ যে ব্যক্তি আমার উপর একবার রুদ পাঠ করবে এবং এর পরিবর্তে আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন। এরপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ‘ওয়াসীলা’ প্রার্থনা করবে। ‘ওয়াসীলা’ হ’ল জান্নাতের একটি উচুঁ স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে শুধু একজন পাবেন। আর আমার আশা আমিই হব সেইজন। তাই যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসীলা’র দো‘আ করবে, ক্বিয়ামতের দিন তার জন্য সুফারিশ করা আমার উপর আবশ্যক হয়ে দাঁড়াবে’।[23]

  • ক্বিয়ামতের দিন মর্যাদা লাভ :

দুরুদ শরিফ পাঠ কারি আল্লাহ রহমতে কিয়ামতের দিন বিশেষ বিশেষ মর্যাদা দিবে আল্লাহ তাআ’লা।

রাসূল (ছাঃ) বলেন,

أَوْلَى النَّاسِ بِيْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَكْثَرُهُمْ عَلَىَّ صَلاَةً،

‘ক্বিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে যে আমার উপর সবচেয়ে বেশী দরূদ পড়ে’।[21]

  • আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত লাভ :

দুরুদপাঠ করলে আল্লাহ তাআ’লা তার পক্ষ থেকে রহমত ফজিলত দিতে তাকে বন্ধাকে। আল্লাহ তাআ’লা বেশি বেশি করে এই রহমত দিতে তাকে।

আল্লাহ বলেছেন,

مَنْ صَلَّى عَلَيْكَ صَلَّيْتُ عَلَيْهِ وَمَنْ سَلَّمَ عَلَيْكَ سَلَّمْتُ عَلَيْهِ،

‘আপনার উপর যে দরূদ পাঠ করবে আমিও তার উপর রহমত, বরকত নাযিল করব, আর যে আপনার উপর সালাম পাঠাবে আমি তার উপর শান্তি বর্ষণ করব’। (নবী করীম (ছাঃ) বলেন) ‘আর এজন্য আমি শুকরিয়ার সিজদা করি’।[17].

দুরুদ শরীফের ঘটনা

এক যুবক কাবাঘরে গেছে কাবা শরীপ তওয়াব করতে।  কিন্তু সে কোন কিছু জানে না, সে বসে বসে কান্না করতেছিল। তুমি কান্না কর কেন যুবক। আমি কিছুই জানি না। তুমি কি কিছুই জান না, যুবক বলেন আমি সধু দুরুদ পাঠ করতে পারি,  তখন তাকে বলে এই আমলটি করতে তাক, এর পরে ই যুবক দুরুদ পাঠ করে অনেক মর্যাদার অধিকারি হলো। তখন একটি লোক দেখল যে সে কি করল যে এত মর্যাদার অধিকারি হলো। তখন সে যুবক থেকে জানতে পারল যে সে তেমন কোন কিছু জানে না শুধু দুরুদের এবাদত করে।

তখন থেকে সে লোক সকালে বিকালে দুরুদের আমল শুরু করল।

কিছু দিন পরে সে লোক মারা গেল। মারা যাওয়ার সাথে সাথে তার  মানুষের চেহেরা শুকুরের মত হয়ে গেছে। তার কাছে শুধু তার ছেলেই ছিল। তখন সে ছেলে তার বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আবাক হয়ে তার বাবার এই শুকরের মত হয়ে গেছে। এমন কি করত বাবা যে তার চেহেরা শুকরের মত হয়ে গেল।

তার ছেলে বিপদে পড়ে গেল কিভাবে তাকে জানাযা ও করব দেওয়া যায়। মানুষ জানা জানি হয়ে গেলে কি হবে।  সে হাঁটুর দিকে মাথা নিয়ে কান্না করতে ছিল। তখন দেখে যে পাগড়ি পড়া এক লোক তার বাবার কাছে এল। এসে তার বাবার কাপনের কাপড় মুখ থেকে সরিয়ে হাত বুলিয়ে দিল। তার বাবার চেহেরা শুকরের থেকে নূরানী চেখেরা হয়ে গেল। তখন ঐ ছেলেটা অবাক হয়ে গেল।  তখন জিজ্ঞেসা করল কে আপনি কে তখন বলে আমি হলাম হযরতে মোহাম্মদ সা: তখন ছেলেটি জিজ্ঞেসা করল যে আমার বাবা কি করত যে তার জন্য ছুটে চলে আসলেন।

তোমার বাবা বড় কোন আলেম ছিল না সে শুধু প্রতিদিন সকালে ও বিকালে ৩০০ বার করে দুরুদ পাঠ করত।

এই হলো দুরুদের ঘটনা। যে সব লোক এই আমল করবে তাকে নবী রাসূলগন কিয়ামতের দিন নবীর শাফায়েত পাবেন।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।