রজব মাস মানে মেরাজের মাস, তাই এই মাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলত- এটি কোরআন ও হাদিসে নেই এটি সম্পর্কে কোন কথা নেই। ২৭ তারিখে মেরাজ হয়েছে এমনটা মনে করেন অনেকেই, এটি মনে করা যাবে না, এটি কুসংস্কার। ২৭ তারিখ কেন্দ্র করে বিশেষ কোন আমল, উদযাপন করা এগুলো বেদাত।
আল্লাহ তাআ’লা আরবি বারটি মাস গুলোর মধ্যে চারটি মাসকে সম্মানিত ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন। এর মধ্যে রজব মাসকে ও বলেছেন সম্মানিত। আবার এই মাসেই অনেক কুসংস্কার ও রয়েছে। এই মাসে যুদ্ধ থেকে শুরু করে কোন পাপ কাজ করা যাবে না। অন্য মাস গুলোর থেকে ঐ মাসে গুরুত্বপূর্ণ যেমন থেমন ভাবে পাপ কাজ গুলো বাদ দিতে হবে।
রজব মাসের ফজিলত:
অনেকেই মনে করেন যে এই মাসে মেরাজের মাস। এটি হাদিসে কোন সম্পর্কে নেই, এটি ভুল ধারণা। বেশির ভাগ মানুষ মনে করে ২৭ তারিখে মেরাজ এটি হাদিসে এবং কোরআনে কোন মিল নেই।
রজব মাসের পূর্ণ নাম হলো ‘আর রজব আল মুরাজজাব’ বা ‘রজবুল মুরাজ্জাব’। ‘রজব’ অর্থ ‘সম্ভ্রান্ত’, ‘প্রাচুর্যময়’, ‘মহান’। ‘মুরাজ্জাব’ অর্থ ‘সম্মানিত’; ‘রজবে মুরাজ্জাব’ অর্থ হলো ‘প্রাচুর্যময় সম্মানিত মাস’।
হারাম তথা সম্মানিত ও যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ মাসগুলোর অন্যতম হলো রজব।
হুজুর সা: বলেন, রজব মাসের প্রথম রোজা (৩)তিন বছরের গুনাহের কাপারা। ২য় দিনের রোজা ২ বছরের গুনাহের কাপারা। ৩য় দিনের রোজা ১ বছরের গুনাহের কাপারা। হযরত মোহাম্মদ সা: বলেন যে ব্যাক্তি রজব মাসে ১টি রোজা রাখল সে যেন এক বছরের মাসের কাপারা
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি রজব মাসের সকালে ও রাতে ৭০ বার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ্ ওয়া আতুবু ইলাইহি’ বলে এবং যিকর শেষ হওয়ার পর হাত উঁচু করে বলে: হে আল্লাহ্ আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার তওবা গ্রহণ করে নাও তাহলে যদি সে রজব মাসে মারা যায় তবে মহান আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট থাকবেন এবং পবিত্র রজব মাসের বরকতে (জাহান্নামের) আগুন তাকে স্পর্শ করবে না।
হজরত মুসা ইবনে জাফর (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি পবিত্র রজব মাসে একদিন রোজা রাখে,সে ব্যাক্তি এক বছর জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পায় এবং যে ব্যক্তি তিনদিন রোজা রাখে তার উপর বেহেশত ওয়াজিব হয়ে যায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللَّهِ وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ (الأنعام:2)
“হে মু’মিনগণ,আল্লাহর নিদর্শনসমূহ (নিষিদ্ধ বস্তু) হালাল মনে করো না এবং সম্মানিত মাসসমূহকে।” (মায়েদা-২)
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার সংরক্ষিত, নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ-যেগুলোকে তিনি সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং অনাধিকার চর্চা হতে বারণ করেছেন, সেগুলোকে তোমরা হালাল মনে কর না। যার ভেতর ভ্রান্ত বিশ্বাস, নিষিদ্ধ-কাজ, উভয়ই অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ. (التوبة:36)
“এতে তোমরা নিজেদের উপর অত্যাচার (ক্ষতিসাধন) করো না।” (সূরা তাওবা : ৩৬)
অর্থাৎ, সম্মানিত মাস গুলোতে। যেহেতু আল্লাহ তাআলা এ মাস গুলোকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেছেন, তাই এর সম্মান যথাযথ রক্ষা করা। এবং এর মর্যাদা ও পবিত্রতার লক্ষ্য করত: এতে কোন গুনাহে লিপ্ত না হওয়া।
নবী (স.) হতে বর্ণিত হয়েছে : যে ব্যক্তি রজব মাসে এক হাজার বার (لا إله إلا الله) বলবে, মহান আল্লাহ তায়ালা তাকে ১ লক্ষ সওয়াব প্রদান করবেন এবং তার জন্য বেহেশতে ১ শত শহর নির্মাণ করে দিবেন।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘রজব হলো আল্লাহর মাস, শাবান হলো আমার মাস; রমজান হলো আমার উম্মতের মাস।’ (তিরমিজি)
রজব মাসের রোজার নিয়ত সম্পর্কে আলোচনা :-
সেহরি খাওয়ার পড় থেকে দিনের শেষ ভাগে মনে মনে পড়লেই সেটা আদায় হয়ে যাবে। রজব মাসের রোজার নিয়ত ঠিক ফরজ রোজার মতই নিয়ত করলেই হবে। রজব মাসের রোজার অনেক ফজিলত তু আছে। এই রোজা রাখলে আল্লাহ তাআ’লা সকল মুসলমানদের সকল গুনাহ থেকে মাফ করে দেয়।
রজব মাসের রোজার নিয়ত বাংলা:
আমি আজ রজব মাসের রোজা রাখার নিয়ত করলাম। এভাবে পড়লেই হয়ে যাবে। যারা আরবি পাড়েন তারা ঐটায় পড়ায় উত্তম।
নিয়ত মানে হলো কোন কাজ করার মন মানসিকতা তৈরি করাকে বুঝায়। নিয়ত শুধু মুখে বলতে হবে তা না, মনে মনে বা ইচ্ছে করলেই আদায় হয়ে যাবে। রোজার কোন সমস্যা হবে না।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা সহ বাকি সকল রোজা রাখব আল্লাহ তাআলা তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০১; তিরমিজি, হাদিস : ৬৮৩)
তিনি বলেন, ‘তোমারদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে- যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
রজব মাসের রোজার নিয়ত টিক রমজানের রোজার নিয়তের মতই, তাই রমজানের রোজার নিয়ত করলেই হয়ে যাবে।
রোজার আরবি নিয়ত:
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
রোজার নিয়তের বাংলা উচ্চারণ :
নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
রোজার নিয়তের বাংলা অর্থ :
হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
তাই আমরা জানতে পারলাম যে রজব মাসের রোজার নিয়ত। আল্লাহ তাআ’লা রোজাদার ব্যক্তির সকল গুনাহ মাপ করে এবং যা ছায় তা দেয়। রোজা রাখলে আল্লাহ তাআ’লা অনেক নেকি পাওয়া যায়। মাঝে মাঝে আমরা নফল রোজা রাখব আমিন।