রমজান মাসে আমাদের সকলের উচিত এই ফরজ রোজা গুলো আমলের সাথে পালন করা। ফরজ হলো হলো সত্য নিয়তে এক মাস রোজা পালন করা। কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মোমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদের প্রতিও; যাতে করে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)। 

রোজার ফরজ ৩ টি : 

তা হলো,

১. নিয়ত করা ।


২. সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা।


৩. যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা।

আবার অন্যভাবে বলা যায় রোজার ফরজ ৬০ টি তা হলো,৩০ রোজার ৩০ নিয়ত করা ফরজ  এবং ৩০ টি রোজা রাখা ও ফরজ।এভাবে বললে ফরজ হয় ৬০ টি।

১. নিয়ত করা

প্রতিটি   কাজ   তার   নিয়তের   উপর  নির্ভরশীল। তাই আমরা কাজ করার সময় নিয়টা সহিত রাখব। আল্লাহ তাআ’লা সহিত নিয়ত আমল গুলো কবুল করেন বেশি। আমরা সহিত নিয়ত করব এবং আমল করব।

রোজার ফরজ এর মধ্যে প্রথম হলো সহিত নিয়ত করা। নিয়ত যার যত ভালো হবে মানে সহি হবে তার আমল ততই ভালো হবে জান্নাতে যেতে পারব।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, “আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তার জন্যই দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটি হলো সঠিক দ্বীন। (সূরা বাইয়্যিনাহ : ৫)

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানসহ পূণ্যের আশায় রমযানের সিয়াম ব্রত পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।

সহীহ বুখারী হাদিস নং ৩৮

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এসে বললেন, তোমাদের নিকট কোন কিছু আছে কি ? আমি বললাম না। তিনি বললেন, তাহলে আমি সিয়াম পালন করছি। এরপর আরেকদিন তিনি আমাদের কাছে এলেন; আমরা বললাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের জন্য হায়স (ঘি এবং পনির মিশ্রিত খেজুর) হাদিয়া পাঠান হয়েছে; তিনি বললেন, তুমি তা আমাকে দেখাও, আমার তো ভোর হয়েছে শাহীন অবস্থায়; তারপর তিনি তা আহার করলেন। (মুসলিম : ২৬০৫)

 যে ব্যক্তি রোজার নিয়ত ছিন্ন করে দেয়, তার রোজা বাতিল। কেননা রাসূল (সা:) বলেছেন, সমস্ত কর্ম নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং মানুষের তাই প্রাপ্য হয় যা সে নিয়ত করে। (বুখারী : ১)

২. সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা

রোজা বা রমজান মাসে দিনের বেলা ও রোজা রাখা অবস্থায় সকল পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ তাআ’লা তার বন্ধাদের এই মাস বোনাস হিসাবে দিয়েছেন।

আর যতক্ষণ না ভোরের সাদা রেখা কালো রেখা থেকে পৃথক হয়ে যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা খাও ও পান কর। তারপর রাতের আগমন পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কর। আর তাদের সাথে (স্ত্রীদের সাথে) সহবাস করো না, যখন তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত থাকো। এসব আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমা। সুতরাং তোমরা এগুলো নিকটে যেও না। এভাবে আল্লাহ মানুষের সামনে স্বীয় নিদর্শনাবলী স্পষ্ট রূপে বর্ণনা করেন, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে “ (সূরা বাকারা : ১৮৭)

আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হলো ‘তোমরা পানাহার কর (রাত্রির) কাল রেখা থেকে (ভোরের) সাদা রেখা যতক্ষন স্পষ্ট রুপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়’ তখন আমি একটি কাল এবং একটি সাদা রশি নিলাম এবং উভয়টিকে আমার বালিশের নিচে রেখে দিলাম। রাতে আমি এগুলোর দিকে বারবার তাকাতে থাকি। কিন্তু আমার নিকট পার্থক্য প্রকাশিত হলো না। তাই সকালেই আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গিয়ে এ বিষয় বললাম। তিনি বললেনঃ এতো রাতের আঁধার এবং দিনের আলো।

সহীহ বুখারী হাদিস নং ১৯১৬

তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন, তোমার বালিশ তো খুবই বড় দেখছি। যদি কালো ও সাদা সুতা (সুবহি কাযীব ও সুবহি সাদিক) তোমার বালিশের নীচে থেকে রাখো। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম) আদী (রা:) এর বর্ণনা শুনে কৌতুক করে বলেছেন যে, গোটা পূর্বাকাশ যদি তোমার বালিশের নিচে রেখে থাকো তাহলে সে বালিশ তো খুব বড়ই দেখছি ( বুখারী : ৪৫০৯)  

৩. যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা।

যৌন আচরত থেকে দিনের বেলা করা যাবে না রোজা অবস্থায়। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সা: তিনি রমজান মাসে স্ত্রী সহবাস ও স্ত্রীর কাছে যেত না। রমজান মাস হলো রহমতের মাস। এই মাসে বেশি বেশি করে আমাল করতে হবে। দিনের বেলা স্ত্রীর কাছে যাওয়া যাবে না। আল্লাহ তাআ’লা হারাম করেছেন। রাতের বেলা যৌন আচরণ করতে  পারবেন।

সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সঙ্গে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদের ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

তাই আমরা জানতে পারলাম যে, রোজার ফরজ ৩ টি। এই রোজার ফরজ গুলো পালন করতে হবে। এই রোজার ফরজ গুলো মানলে আল্লাহ তাআ’লা দুনিয়ায় ও আখেরাতে আমাদের উচ্চ র্মযাদা দান করবেন আমিন।

Similar Posts

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।